শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: কথায় আছে, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে। জীবনদানকারী বিধাতার পরেই পৃথিবীতে জীবন সুস্থ রাখতে মানুষকে ডাক্তারের স্মরণাপন্য হতে হয় প্রায়ই। কিন্তু সেই ডাক্তার যদি হয় হাতুড়ে তাহলে জীবন বাঁচার চাইতে মরণের দিকে বেশি ধাবিত হয়। এমনই এক হাতুড়ে ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে বগুড়ার শেরপুরে। হাতুড়ে ডাক্তারের ভুতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। এমনই এক দন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুনীল বিশ্বাসের ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর হাতে পচন ধরায় থানায় অভিযোগও হয়েছে।
জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল উপজেলার শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের দরিমুকুন্দ গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রেহেনা বেগম দাতের ব্যথার জন্য সুনীল বিশ্বাসের শেরপুর শহরের হাটখোলা রোডের সীমান্ত ফার্মেসিতে দন্ত চিকিৎসা নিতে আসেন। সুনীল বিশ্বাস দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য রেহেনা বেগমের ডান হাতে একটি ইনজেকশন পুশ করে। তারপর থেকে সে আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে রেহেনা বেগমের হাতে পচনের সৃষ্টি হওয়ায় গত ৮ মে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, তিনি আশংকামুক্ত নন এবং তার হাতের অপারেশন করতে হবে। এতে অনেক টাকা ব্যয় হবে। এ ঘটনায় ১১ মে শনিবার দুপুরে রেহেনার স্বামী রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে সুনীল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সুনীল বিশ্বাস স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকলেও নিজেকে ‘ডা.’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইনের পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুনীল বিশ্বাস সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ‘ডা. সুনীল বিশ্বাস’ লেখা দেখে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন। তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে সুনীল বিশ্বাস নামের পূর্বে ডা. পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছে। সর্বপ্রকার রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
সুনীল বিশ্বাস ছাড়াও তালতলা জনসেবা ডেন্টাল কেয়ার, হাটখোলা রোড সান্ন্যালপাড়া উজ্জল ডেন্টাল কেয়ার, জয় ডেন্টাল কেয়ার, সীমান্ত ডেন্টাল কেয়ার, রেজিস্ট্রি অফিস চৈতী ডেন্টাল কেয়ার, দুধবাজার মা ডেন্টল কেয়ারসহ উপজেলার আনাচে-কানাচে প্রায় ৩০-৪০টি ভুয়া দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন। একদিকে যেমন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন রোগীরা। নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই মূল উদ্দেশ্য।
রোগীদের ভালো-মন্দ বিবেচনায় নেই। চিকিৎসাসেবা তাদের কাছে হয়ে উঠেছে রোগী মেরে টাকা উপার্জনের কারখানা। এই প্রতারকদের কারণে চিকিৎসা সেক্টরের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। সুনীল বিশ্বাসে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে কিছু চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করে। সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে সুনীল বিশ্বাস নিজের মতো করে দিনের পর দিন চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাতে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়।
এ ব্যাপারে ডা. তন্ময় স্যান্ন্যাল (এমবিবিএস,বিডিএস) জানান, সরকারি অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে-কানাচে চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজ করতে করতে চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করে চিকিৎসা এবং নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সকল প্রকার রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবীর অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। কেউ যদি নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুল চিকিৎসা প্রদান করে, তবে তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply